পালং শাকের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম

এখানে পালং শাকের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম শেয়ার করা হলো।

পুষ্টিবিদদের মতে, ভালো খাবার খেলে আমাদের শরীর সুস্থ ও ভালো থাকতে পারে। বাজে লাইফস্টাইল এবং উল্টোপাল্টা খাবারের বদলে শাকসবজি খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। তেমনই একটি পুষ্টিকর সবজি হলো পালং শাক

আগে শীতকালে পালং শাক বেশি পাওয়া যেত, তবে এখন প্রায় সারা বছরই এটি পাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন A, ভিটামিন B6, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও জিংক

পালং শাক দিয়ে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করা যায়। যেমন: শাক ভাজা, চচ্চড়ি, ছেঁচকি এবং পনির দিয়ে তৈরি নানা সুস্বাদু পদ।

পালং শাক নিয়মিত খেলে শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত ওজন কমাতে পালং শাকের উপকারিতা:

ওজন কমানো অনেক সময় দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, কারণ অতিরিক্ত ওজনের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ওজন কমানোর জন্য যদি কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, সেখানে পালং শাক একটি কার্যকর খাবার হতে পারে।

পালং শাক অত্যন্ত কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার এবং এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার রয়েছে। পালং শাক বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে এর ফাইবার আমাদের পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে, ফলে খিদে কম পায় এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য সুপারফুড:

মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ ও কার্যকর রাখতে পালং শাক অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন K রয়েছে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

নিয়মিত পালং শাক খেলে স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী হয় এবং মানসিক কার্যক্ষমতা উন্নত হয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা:

হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হাড়কে শক্তিশালী রাখতে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও শক্তি ঠিকঠাক রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে। নিয়মিত পালং শাক খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমে।

রক্তাল্পতা দূরীকরণ:

রক্তাল্পতা দূর করতে এবং শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে পালং শাক অত্যন্ত কার্যকরী। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়, যা শরীরকে দুর্বল করে দিতে পারে।

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত পালং শাক খেলে রক্তাল্পতা সমস্যা কমে এবং শরীরের শক্তি বজায় থাকে।

পালং শাকের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা:

১. বাতের ব্যথা, অস্টিওপোরোসিস এবং মাইগ্রেনের মতো মাথাব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসেবে পালংশাক কার্যকর।

২. স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি খুবই সহায়ক।

৩. প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন-সি থাকার কারণে রক্তস্বল্পতা দূর করতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৪. পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত তৈরিতে ও দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে ভূমিকা রাখে।

৫. কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পালংশাক খুবই উপকারী।

৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৮. দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৯. ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি একটি স্বাস্থ্যকর সবজি।

১০. দেহের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পালংশাক সাহায্য করে।

পালং শাকের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম):

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ক্যালোরি২৩ ক্যালোরি
প্রোটিন২.৯ গ্রাম
চর্বি০.৪ গ্রাম
শর্করা৩.৬ গ্রাম
ফাইবার২.৬ গ্রাম
ভিটামিন A৯৩৬৭ IU
ভিটামিন C৮৫.৫ মিগ্রা
ভিটামিন K৪৮০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন B6০.১৯ মিগ্রা
ক্যালসিয়াম৯৪ মিলিগ্রাম
লোহা (আয়রন)২.৭ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম৭৩ মিলিগ্রাম
ফসফরাস৫১ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম৫৫৩ মিলিগ্রাম

পালং শাকের অন্যান্য ১৫ টি উপকারিতা:

১. নিয়মিত পালং শাক খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

২. পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

৩. পালং শাকে আছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৪. নিয়মিত পালং শাক খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৫. পালং শাকে থাকা ফলিক অ্যাসিড হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৬. পালং শাকে থাকা উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।

৭. যাদের কিডনির সমস্যা বা গেঁটে বাত রয়েছে, তাদের পালং শাক না খাওয়াই ভালো।

৮. পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

৯. পালং শাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

১০. পালং শাক হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে, কারণ এতে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন K রয়েছে।

১১. এতে থাকা ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

১২. পালং শাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী, কারণ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

১৩. পালং শাক লিভারের কার্যকারিতা ভালো রাখতে সহায়তা করে।

১৪. পালং শাকে থাকা ভিটামিন A ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

১৫. পালং শাক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়ক।

পালং শাক কাঁচা খেতে নেই কেন?

১. অক্সালেটের উচ্চ মাত্রা:
পালং শাকে প্রচুর অক্সালিক অ্যাসিড থাকে, যা কাঁচা খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাধাগ্রস্ত করে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

২. পরিপাকজনিত সমস্যা:
কাঁচা পালং শাকের আঁশ ও রাসায়নিক উপাদান হজমে সমস্যা করতে পারে, যার ফলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা বদহজম হতে পারে।

৩. কীটনাশক ও জীবাণু:
কাঁচা শাকসবজিতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ও ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে। ভালোভাবে ধুয়ে রান্না না করলে পেটের অসুখ হতে পারে।

৪. গয়ট্রোজেনিক প্রভাব:
কাঁচা পালং শাকে থাকা গয়ট্রোজেন থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

পরামর্শ:

পালং শাক হালকা সিদ্ধ বা ভাপিয়ে রান্না করে খাওয়া ভালো, যাতে পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে এবং সহজে হজম হয়।

প্রশ্ন: পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে?

পালং শাকে ভিটামিন A, B6, C, E, এবং K থাকে। এগুলি চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং রক্ত জমাট বাঁধাতে সহায়ক। পালং শাক একটি পুষ্টিকর সবজি, যা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে।

প্রশ্ন: পালং শাকের ইংরেজি নাম কি?

পালং শাকের ইংরেজি নাম Spinach

প্রশ্ন: পালং শাক কোন ঋতুতে চাষ হয়?

পালং শাক সাধারণত শীতকাল এবং বর্ষাকালে চাষ হয়। তবে, শীতকাল এটি সবচেয়ে ভালো হয় এবং এই সময়ে এর বৃদ্ধি সর্বোত্তম। শীতকাল এবং বর্ষাকালে তাপমাত্রা সাধারণত ১৫-২০°C এর মধ্যে থাকলে পালং শাক ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।

Disclaimer:

এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। এটি পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নয়। কোনো কিছু গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আরও দেখুন: গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

Leave a Comment