টক দই খাওয়ার এই ৬ টি উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই টক দই খাওয়া শুরু করবেন।
কথায় বলে রোজ একটা আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। ঠিক সেরকমই আর একটা খাবারের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। সেই খাবারটি হলো টক দই। টক দই আমাদের শরীরের জন্য নানা ধরনের কাজ করে থাকে। নিয়মিত টক দই খেলে তা আমাদের নানাভাবে উপকার করে। টক দইয়ে আছে আমিষ, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি। আজ আমরা টক দই খাওয়ার ৬ টি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা:
পেটের যেকোনো সমস্যা দূর করে টক দই:
দইতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই এটি পেটের যেকোনো প্রকারের সমস্যা যেমন- বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ইত্যাদি নিরাময় করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে টক দই -এর ভূমিকা:
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের দই খাওয়া উচিত। দইয়ে পাওয়া পুষ্টি উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমায় এবং হার্ট সুস্থ থাকে।
চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেয় দই:
চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেতে দই সবচেয়ে উপকারী। দই প্রাকৃতিক গুণে পরিপূর্ণ। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। এর ফলে ব্রণ, ট্যানিন, বলিরেখা এবং বার্ধক্যের মতো অনেক সমস্যার সমাধান হয়।
হাড়কে মজবুত করতে টক দই খাওয়ার উপকারিতা:
দইয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড়কে মজবুত করে। এটি অস্টিওপরোসিস এবং আর্থ্রাইটিসে মতো রোগের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মানসিক চাপ কমাতে দই এর উপকারিতা:
দইয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া (ল্যাকটোব্যাসিলাস) রয়েছে যা আমাদের শরীরের মাইক্রোবায়োমের চরিত্র পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে আমাদের বিষন্নতা দূর হয়, মেজাজ ভালো থাকে।
যাদের অনেক টেনশন আছে তাদের প্রতিদিনের খাবারে টক দই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মুখের ঘা দূর করে টক দই:
দিনে ২-৩ বার মুখের আলসারে টক দই লাগালে আরাম পাওয়া যায়। দই ও মধু সমপরিমাণে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খেলেও মুখের ঘা সেরে যায়।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা পাওয়ার জন্য নীচের বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে:-
(১) দই গরম করে খাওয়া উচিত নয়, তাহলে উপকারী গুণগুলি নষ্ট হয়ে যায়।
(২) সকালে বা দুপুরের খাবারে দই খাওয়া যেতে পারে। তবে রাতে টক দই না খাওয়াই ভাল।
(৩) এক দিন অন্তর এক দিন টক দই খাওয়া ভাল।
(৪) দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিন কলা, আঙুর, বেদানার মতো স্বাস্থ্যকর কিছু ফল।
(৫) রোজ দই খাওয়ার অভ্যাস থাকলে দই না খেয়ে মিশিয়ে নিতে পারেন আখরোট, কাজু বা কিশমিশ।
দই খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা:
১. ঘরে তৈরি দই সবচেয়ে ভালো।
২. দই গ্যাসে গরম করে বা রোদে রেখে খাওয়া উচিত নয়।
৩. রাত্রে ঠান্ডা দই খাবেন না।
৪. ফ্রিজ থেকে বের করে করেই দই খাবেন না। কিছুক্ষন বাইরে রেখে দিয়ে তারপর খান।
৫. সর্দি, কাশি হলে দই খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
দুধ থেকে টক দই তৈরির পদ্ধতি:
নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনারা আপনাদের বাড়িতেই টক দই তৈরী করতে পারবেন।
১. উচ্চ আঁচে দুধ গরম করুন এবং হাতা দিয়ে আস্তে আস্তে দুধ নাড়তে থাকুন।
২. এরপর অল্প আঁচে দুধ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন।
৩. সাদা রঙের কাপড় দিয়ে দুধ ছেঁকে নিন।
৪. ঠান্ডা হওয়ার আগেই দুধ ফেটিয়ে নিন।
৫. পাত্রে এটি বের করার সাথে সাথে এটি ফেটিয়ে নিন, এতে ক্রিমটি ভালভাবে সেট হয়ে যাবে।
৬. এরপর দুধে আগের ঘন দই মিশিয়ে দিন।
৭. পাত্রটিকে ভালোভাবে ঢেকে রেখে দিন। এই পাত্রটি ঝাঁকাবেন না বা স্পর্শ করবেন না।
৮. ৭ থেকে ৮ ঘন্টা এর মধ্যেই দই তৈরী হয়ে যাবে।
টক দই খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে কারণ টক দইয়ে রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টিগুণ যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
টক দইয়ের পুষ্টিগুণের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
(১) প্রোটিন: টক দইয়ে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(২) ক্যালসিয়াম: এটি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, যা হাড় এবং দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
(৩) ভিটামিন বি: বিশেষত ভিটামিন বি2 (রিবোফ্লাভিন) এবং ভিটামিন বি12 থাকে, যা শক্তি উৎপাদন এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতায় সাহায্য করে।
(৪) প্রোবায়োটিক: টক দইয়ে প্রোবায়োটিক উপাদান থাকে, যা হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
(৫) ফসফরাস: এটি হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
(৬) পটাশিয়াম: পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়।
(৭) দুধের শর্করা (ল্যাকটোজ): টক দইয়ে কিছু পরিমাণ ল্যাকটোজ থাকে। এটা শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায়।
(৮) ম্যাগনেসিয়াম: ম্যাগনেসিয়াম পেশি এবং স্নায়ুর কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৯) ভিটামিন ডি: টক দইয়ে কিছু পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকতে পারে। এটি ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে।
(১০) ফ্যাট: টক দইয়ে কিছুটা ফ্যাট থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
টক দই নিয়মিত খেলে হজমের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs: Frequently Asked Questions)
১. দইয়ের পুষ্টিগুণ কি কি?
উত্তর: দইয়ে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-১২, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
২. কাদের দই খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর: নিম্নোক্ত রোগীদের দই এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন-
বাতের রোগী, হাঁপানি রোগী, কিডনি রোগী, অ্যাসিডিটির সমস্যা, লিকোরিয়া রোগী।
৩. দই খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর: দই খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল সকালবেলা খালি পেটে। রাতে দই খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
৪. খাওয়ার আগে না পরে দই খাওয়া উচিত?
উত্তর: একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খাওয়ার আগে দই খান, তাদের পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি হয় এবং অন্ত্রের প্রদাহও কমে। অন্যদিকে যারা খাবার খাওয়ার পর দই খেয়েছেন তাদের বিশেষ কোনো উপকার হয়নি।
৫. টক দই খাওয়ার উপকারিতা কী কী?
উত্তর: ১) টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২) টক দই পেটে গিয়ে ভিটামিন বি তৈরি করে।
৩) টক দই পেটের ঘা সারাতে সাহায্য করে।
৪) টক দই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৫) টক দই অকাল চুল পাকা বন্ধ করে।
মনে রাখবেন, টক দই পেটকে শক্তিশালী করে, আর মিষ্টি দই পেটে গ্যাস তৈরি করে।
Disclaimer:
এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। এটি কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনো কিছু গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।