আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জেনে নিন আমন্ড বাদাম খাওয়ার আশ্চর্যরকমের ৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা

বর্তমানে আমন্ড বাদাম সর্বাধিক উৎপাদিত হয় আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে। কিন্তু গোটা বিশ্বের মানুষ আজ আমন্ড বাদাম খাচ্ছেন। এর পিছনে রয়েছে আমন্ড বাদামের আশ্চর্য রকম গুণাবলী। আপনার ডায়েট চার্টে গোটা কয়েক আমন্ড বাদাম রাখলে এর উপকারিতা আপনিও টের পাবেন।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা:

আমন্ড বাদাম বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আমাদের হাড় থেকে শুরু করে সমগ্র অঙ্গকে শক্তিশালী করতে আমন্ড বাদাম খুব উপকারী। আসুন জেনে নেই আমন্ড বাদামের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।

১. আমন্ড বাদাম শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কমায় এবং উপকারী হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন নামক কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও আমন্ডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে যা হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়।

২. আমন্ড বাদাম সিস্টোলিক রক্তচাপ কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

৩. আমন্ড বাদাম ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-E সমৃদ্ধ। তাই আমন্ড বাদামের একটি দানা যথেষ্ট পুষ্টিকর।

৪. আমন্ড বাদামে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা হাড়কে মজবুত করে।

৫. আমন্ড বাদাম একটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার। তা সত্ত্বেও এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি ও মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

এছাড়াও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমন্ড বাদাম ভীষণ উপকারী।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার নিয়ম:

আমন্ড বাদামের উপকারিতা পাওয়ার জন্য নিচের নিয়মে এটি গ্রহণ করতে হবে।

১. সকালে বা বিকেলে জলখাবারের সাথে ৫ থেকে ৬ টি আমন্ড বাদাম খেতে পারেন।

২. ভালো স্বাদ ও গন্ধের জন্য আমন্ড বাদাম ভেজে খেতে পারেন।

৩. সন্ধ্যেবেলায় কিছু আমন্ড জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ওগুলো সকালের খাবারের সাথে খেতে পারেন। ভেজা আমন্ডের দারুন গুনাগুন রয়েছে।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার আরও কিছু উপকারিতা

১) আমন্ড বাদামে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং প্রোটিন। যা আমাদের হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে।

২) আমন্ড বাদামে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি এসিড থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাটি হিসেবে পরিচিত। আমন্ড বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরের ভেতরের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

৩) আমন্ড বাদামে ভিটামিন ই সহ আরো বিভিন্ন ভিটামিন মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৪) আমন্ড বাদামে প্রোটিন ফাইবার ও ফ্যাট থাকার কারণে কাঠবাদাম খেলে ক্ষিদে কমে যায় যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতাকে কম করে আনে ফলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য হয়।

৫) গবেষণায় দেখা গেছে খাবার খাওয়ার পর আমন্ড বাদাম খেলে তা ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়

৬) যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা যদি নিয়মিত আমন্ড বাদাম খেতে পারেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৭) আমন্ড দামে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদের দাঁত ও হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত আমন্ড বাদাম খেলে দাঁত মজবুত হবে এবং হাড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য হবে।

৮) আমন্ড বাদামে অতিমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য অনেক সাহায্য করে।

৯) আমন্ড বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে আর এই ভিটামিন ই।

১০) আমন্ড বাদাম শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। আমন্ড বাদামে ভিটামিন ই এর পাশাপাশি মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট ও মিনারেল রয়েছে। তাই বাচ্চাদের মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য প্রতিদিন কাঠবাদাম খাওয়ানো উচিত।

১১) আমন্ড বাদাম আমাদের কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে দেহের কোষ ভালো থাকে এবং বয়স বাড়লেও কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না

১২) আমন্ড বাদাম আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

১৩) নিয়মিত আমন্ড বাদাম খেলে আমাদের চুল ভালো থাকে। এছাড়া মুখের ব্ল‍্যাকহেডস হোয়াইটহেড এবং ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

১) আমন্ড বাদাম ওজন কমায় ঠিকই কিন্তু বেশি পরিমাণে আমন্ড বাদাম খেলে আমাদের ওজন বেড়ে যাবে।

২) প্রয়োজনের বেশি আমন্ড বাদাম খেলে এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

৩) বেশি পরিমানে আমন্ড বাদাম খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪) অনেকের আমন্ড বাদাম খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তারা আমন্ড বাদাম খাবেন না।

৫) আমন্ড বাদামে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা অনেক সময় ওষুধের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

৬) আমন্ড বাদামে যে আস্তরণ থাকে সেটাতে ট্যানির নামক উপাদান থাকে যা দেহের ক্ষতি করতে পারে।

৭) যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তারা আমন্ড বাদাম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
FAQs: Frequently Asked Questions

১. আমন্ড বাদাম কিভাবে খায়?

উত্তর: আমল বাদাম কাঁচা বা ভেজে খেতে পারেন। তবে কয়েক ঘণ্টা জলে ভিজে রেখে খেলে বেশি উপকার পাবেন

২. আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি?

উত্তর: আমন্ড বাদাম শরীরের কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, হাঁড় মজবুত করে।

৩. আমন্ড বাদামে কোন ভিটামিন আছে?

উত্তর: আমন্ড বাদামে ভিটামিন-E আছে।

৪. আমন্ড বাদাম কখন খাওয়া ভালো?

উত্তর: সন্ধ্যেবেলায় আমন্ড বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে প্রাতরাশের সাথে সেগুলো খেলে বেশি উপকার পাবেন।

Disclaimer:

এখানে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। এটি কোনো পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনো কিছু গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। অন্যথায় আমরা কোনো মতেই দায়ী থাকবো না।

Leave a Comment